×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • মহামারীতেও দিব্যি বেঁচে বাংলার ধর্মঘটের কালচার

    রুষা ভট্টাচার্য, শুভস্মিতা কাঞ্জী ও বিতান ঘোষ | 26-11-2020

    26 নভেম্বর ছিল কেন্দ্রের শাসকের বিরুদ্ধে রাজ্যের বিরোধী বাম দলগুলি এবং ট্রেড ইউনিয়নের ধর্মঘট।

    ধর্মঘটের দিন গিয়েছে দশ বছর আগেই! তৃণমূল জমানায় গত দশ বছরে রাজ্য সরকার ধারাবাহিক ভাবে বিরোধিতাই করে এসেছে ধর্মঘটের। তার আগে বাম আমলে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বছরে দু'টো করে বনধ ধর্মঘট ছিল প্রায় বাঁধা। সেই গৎটা ছিল কেন্দ্রের বঞ্চনার বিরুদ্ধে রাজ্যের শাসক দলের প্রতিবাদের। বৃহস্পতিবার 26 নভেম্বর ছিল কেন্দ্রের শাসকের বিরুদ্ধে রাজ্যের বিরোধী বাম দলগুলি এবং ট্রেড ইউনিয়নের ধর্মঘট। কলকাতা আর শহরতলি মিলিয়ে তাতে দেখা গেল জনজীবনে কিছু ছাপ পড়েছে ঠিকই। কিন্তু তরুণ প্রজন্ম, যাঁদের বাম আমলের বনধের স্মৃতি অতটা নেই, তাঁরা দৈনন্দিন কাজকর্মে যথেষ্টই বেরিয়েছেন। রাজনীতির লোকরা অবশ্য যার যার দলের চশমা পরেই এদিনের ধর্মঘটকে দেখেছেন।

     

     

    হুগলি শিল্পাঞ্চল

    সকাল থেকেই প্রায় স্তব্ধ থেকেছে হুগলি শিল্পাঞ্চল। বিভিন্ন ছোটবড় গণসংগঠন এই ধর্মঘটে অংশগ্রহণ করলেও কংগ্রেস এবং বাম দলগুলির সদস্য সমর্থকদেরই ট্রেন-রাস্তা অবরোধের পুরোভাগে দেখা গেছে। ভিক্টোরিয়া জুটমিল সহ অন্যান্য চটকল, পূর্ব রেলের হাওড়া বর্ধমান (মেন) লাইনের বৈদ্যবাটি, শ্রীরামপুর, কোন্নগর স্টেশনে দফায় দফায় রেল অবরোধ – সর্বত্রই এলাকার পরিচিত রাজনৈতিক কর্মীরাই ধর্মঘটের সমর্থনে রাস্তায় নামেনবেলা গড়ালে অবশ্য সকালের প্রভাব বিশেষ লক্ষ করা যায়নি। "আজ তো বনধ, রাস্তায় বেরিয়েছিলেন কেন?' ভদ্রেশ্বরের কান্তি ঘোষকে এই প্রশ্ন করায় জানালেন, "বহুদিন পর সবকিছু স্বাভাবিক হয়েছে। বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করি। পেটের টানে কাজে বেরোতেই হবে।'

     কিন্তু ধর্মঘটীরা তো বলছেন, সাধারণ মানুষের রুজিরুটি নিশ্চিত করতেই তাদের এই ধর্মঘট? হেসে বললেন, "আমাদের রুজিরুটি নিশ্চিত হবে কাজে বেরোলে।' তার প্রশ্ন, "একটা ধর্মঘটে কি আমাদের মতো দিন আনি দিন খাই লোকের সুদিন মিলবে?'  বৈদ্যবাটির কলেজ পড়ুয়া সাধন সেনকে ট্রেনের কামরায় প্রশ্ন করা গেল, আজ কেন বেরিয়েছ, আজ তো বনধ? সে জানাল, "বামেদের ডাকা বনধে আগে তো তেমন কোনও প্রভাব পড়েনি। তাই আজও বেরিয়ে পড়লাম টিউশনে।' কিন্তু, কীসের জন্য আজকের এই ধর্মঘট জানো? কপাল কুঁচকে সে জানাল, "শুনলাম বিজেপির বিরুদ্ধে ধর্মঘট। সবই পলিটিক্স।' সকালে বনধে ভাল রকম প্রতিক্রিয়া দেখা গেলেও, একটু বেলা গড়ালে জনজীবন অনেকাংশেই সচল হতে দেখা গেছে

     

     

    বারাসত

    চাঁপাডালি মোড় সংলগ্ন কোর্ট, বিভিন্ন রাজ্য সরকারি অফিস, তিতুমীর বাসস্ট্যান্ড (যেখান থেকে বনগাঁ, বসিরহাট, সোনারপুর তথা কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় বাস সার্ভিস আছে) এলাকাকে ধর্মঘট সমর্থকরা অবরোধের স্থান হিসেবে বেছে নেন সকালেবাসস্ট্যান্ডে সরকারি বেসরকারি বাস থাকলেও তাতে যাত্রী ছিল না বললেই চলে। বন্ধ দোকানপাট, রাস্তায় প্রাইভেট ট্রান্সপোর্টও হাতে গোনা। তবে রাজ্য পুলিশের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো অবরোধকারীদের বক্তব্য, তারা ন্যায্য দাবিতে ধর্মঘট ডেকেছেনখেটে খাওয়া মানুষের একদিনের অসুবিধার কথা বলে যারা আজকের ধর্মঘটের বিরোধিতা করছেন, তাঁদের ধর্মঘট সমর্থকরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে, সম্পূর্ণ লকডাউনে কমিউনিটি কিচেন থেকে ন্যায্য মূল্যের সবজি বাজার সবেতেই সবেতেই পাওয়া গেছে বামেদের। এসএফআই  সদস্য অনিকেত চক্রবর্তীর  কথায়, "একদিনের লোকসানের বদলে চিরস্থায়ী লাভ মেনে নিয়েছে সাধারণ মানুষ।' বারাসাতের অপর উল্লেখযোগ্য জায়গা কলোনি মোড়ও অবরোধ করেছিলেন বাম কর্মীরা। পুলিশ জোর করে অবরোধ তুলতে চাইলে সামান্য সংঘর্ষ বাঁধে দু'পক্ষের মধ্যে, পুলিশের লাঠিতে কয়েকজন আহতও হন

     

    বেহালা

    ধর্মঘটের চেনা ছবিটা বড় হওয়ার সঙ্গে ক্রমশ পাল্টে গিয়েছে। রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদল হওয়ার পর ছোটবেলার ধর্মঘট মানেই রাস্তায় ক্রিকেট খেলার স্মৃতি পাল্টে এল "অফিস আসতেই হবে, নইলে মাইনে কাটা যাবে', এবং তাই নিয়ে দুই যুযুধান পক্ষের ঝামেলা, রাস্তায় অতিরিক্ত সরকারি বাসের আনাগোনা প্রভৃতি। কিন্তু এই মহামারীর আবহে বাম এবং কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠনগুলোর যৌথ ভাবে ডাকা আজকের ধর্মঘটের ছবিটা যেন আলাদা। কারণ, মূল্যবৃদ্ধি, কেন্দ্রীয় কৃষি আইন, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণ প্রভৃতির প্রতিবাদে ডাকা এই ধর্মঘটে রাজ্য সরকার সক্রিয়ভাবে ধর্মঘট বিরোধিতার রাস্তায় হাঁটেনি বেহালার সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা ডায়মন্ড হারবার রোডে সকাল থেকেই কিছু বাস, বাইক, গাড়ি চলাচল দেখা গেলেও বেসরকারি বাস এবং অটোর সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে অনেক কম। সরকারি বাস চললেও তা অন্যান্য দিনের জেমস লং সরণির ছবিটা ছোটবেলার কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছিল যেন।

    দু'একটা গাড়ি ছাড়া রাস্তা পুরো ফাঁকা, অথচ অন্যদিন অফিস টাইমে হামেশাই যানজট লেগে থাকে এই রাস্তায়। গলির মোড়ে মোড়ে জটলা পাকিয়ে আড্ডা দিতেও দেখা গেল অনেককে বেহালা বাজারের সব দোকানেরই প্রায় ঝাঁপ বন্ধ। খাঁ খাঁ করছে বেহালা বাজার চত্বর। তবে দোকানপাট বন্ধ থাকলেও, অফিস যাত্রী বা কাজে বেরিয়েছেন এমন কিছু মানুষ নজরে এল। বেহালা থানা বাস স্টপে আর পাঁচটা দিন যে উপছে পড়া ভিড় দেখা যায় সকাল 9-10টা নাগাদ, তা আজ নেই। গুটিকয়েক মানুষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তারই মধ্যে একজন কলেজ পড়ুয়া স্নেহা বাড়ুইকে প্রশ্ন করাতে জানালেন, "টিউশনে পরীক্ষা আছে। একেই করোনার জন্য পড়াশোনার যথেষ্ট ক্ষতি হচ্ছে তাই যাচ্ছি। বাড়ি বসে থেকে কী হবে?' কেন আজকের এই ধর্মঘট তা বারংবার মাইকে ভেসে আসছিল এসইউসিআইয়ের অবস্থান মিছিল থেকে। বেহালা লোকাল কমিটির সেক্রেটারি মিহির ঘোষ রায় বলেন, "এটা একটা বড় আন্দোলনের সূচনা। কেন্দ্রীয় সরকার যে ভাবে সাধারণ মানুষকে মারছেন সর্ব ক্ষেত্রে, কৃষি আইন, বিদ্যুৎ আইন, ইত্যাদিতে তার একটা প্রতিরোধ হওয়া উচিত।'

    তবে বেহালা থেকে মাইকের আওয়াজ দিল্লিতে শাসকের কানে পৌঁছাচ্ছে কি?

     

     


    মহামারীতেও দিব্যি বেঁচে বাংলার ধর্মঘটের কালচার-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested