শহরটা কি এই ক’দিনে গ্রাম হয়ে যাবে? শ্যামবাজার মোড়ে পাখিরা মিটিং করবে, অ্যাম্বুলেন্স আর পুলিশের গাড়ি তাহলে হয়তো আবার উঠে যাবে, বৃষ্টিস্নাত কলকাতাকে মুছিয়ে দেওয়ার জন্য আর কোনও পায়ের ছাপ থাকবে না। নেহাত রাস্তার ধারে বাড়ি না হলে একদা খিস্তিপ্রিয় কলকাতাবাসী নীল সাদা রং দেখার জন্য আকুল হয়ে উঠবে।
কী নিদারুন সময়! নেতা-অভিনেতা একসঙ্গে ভাবছেন কী করব, সিপিএম-তৃণমূল একসঙ্গে ভাবছেন কী করব, ক্রীড়াবিদ-রাজনীতিবিদ সবাই ভাবছেন কী করব, প্রেমিক-শ্রমিক একসঙ্গে ভাবছেন কী করব এই তিন সপ্তাহ। বহির্মুখী যাঁরা আছেন হয়তো একটু বিরক্ত হচ্ছেন। ভিডিও কল ইত্যাদি করে কোনও মতে ব্যালান্স করার চেষ্টা করছেন। একটু গুটিয়ে থাকেন যাঁরা, তাঁরা ভাবছেন বেশ হয়েছে। কয়েকদিন পর হয়তো কেউ একটা কথা বলল... উত্তর এল। রুটিন আর মিটিং-এ বাঁধা কোনও এক জীবন হয়তো ভাবল, না বোহেমিয়ান রাপসডি সিনেমা তো খারাপ নয়।
তুমিও সরলে একটু, আমিও সরলাম একটু, পাশে না বসেও কাছে বসা যায়। এক জীবনে অনেকগুলো জীবন কাটানোর সুযোগ হয়েছে আজ। কোনও ইন্ট্রোভার্ট একটু সময় নিয়ে কোনো এক্সট্রোভার্টকে বোঝানোর হয়তো চেষ্টা করলেন, একাকীত্ব অনেক সাধনার ফল। ‘লাভ ইন দ্য টাইম অফ কলেরা’ পড়তে পড়তে হয়তো কোনও ‘বয় ইন দ্য বাক্স’ খুঁজে নিল রাতজাগা তারাকে।
মাঝখান থেকে শহর হয়ে পড়ল ভীষণ একা। প্রথমে অবাক হলেও শহর বুঝতে শিখল, যারা বলত এই শহর জানে আমার প্রথম সব কিছু, তারাও আজকাল শহরকে কিছু বলেনা। চায়ের ভাঁড় আর সিগারেটের ফিল্টার না খেতে পেরে রাস্তার অপুষ্টি হল, হঠাৎ জ্যাম বন্ধ হওয়াতে শহরের বুকে ব্যথা শুরু হল, ‘প্রস্রাব করবেন না’লেখার ঠিক নীচের জায়গাটা ডিহাইড্রেশনে একদিন মারা গেল। কোনও একদিন ভয়ে ভয়ে শহর প্রশ্ন করে ফেলল জানলার গ্রিল ধরে তাকিয়ে থাকা বাচ্চাটিকে, বাচ্চাটা বলল...
-শহর, তোমার সঙ্গে মেশা বারণ।
-কেন?
-তোমার যে ছোঁয়াচে রোগ হয়েছে।
বিষয়টা না বুঝতে পেরে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকল শহর। বৃষ্টি নামল। লুকিয়ে কাঁদল শহর, কিন্তু আজ আর কোনও পা এলোনা কান্না মুছিয়ে দিতে।
আর শহরবাসী ভাবতে লাগলো ইন্টারেক্টিভ মোড আর একটা Black Mirror: Bandersnatch বানাবে কিনা? পথে পা দিলেই মৃত্যু, এখনও গোটা পৃথিবীর কাছে করোনা রহস্য অনাবিষ্কৃত।
শেষটা ট্র্যাজিক না কমিক এখনও কেউ জানে না। সবাই মিলে এই সাসপেন্স থ্রিলারটায় অভিনয় না করলেই হত না? একজন তো কেউ গল্পের শেষটা বলে দিক... সবার আজ স্পয়লার চাই।
অনেকটা কাঁদার পর শহর ভাবল, যা হয়েছে ভালো হয়েছে.. এবার যদি মানুষ গালির মাঝে হাততালি দেয়, লেখার মাঝে একটু পড়ে, বলার মাঝে একটু শোনে...
কিন্তু তাও ওরা আসছে না কেন? শহরের চোখ টা আবার হঠাৎ ঝাপসা হয়ে গেলো। বৃষ্টি নামল...
কী নিদারুন সময়! নেতা-অভিনেতা একসঙ্গে ভাবছেন কী করব, সিপিএম-তৃণমূল একসঙ্গে ভাবছেন কী করব