×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • স্বাধীনতার সৈনিক কানাইলাল ভট্টাচার্য

    শুভস্মিতা কাঞ্জী | 10-08-2021

    কানাইলাল ভট্টাচার্য এবং তাঁর বোরের কোল্ট জুপিটার রিভলভার

    সামনে ছেলের মৃতদেহ, মাকে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে সামনে পড়ে থাকা লাশটি কি তাঁরই সন্তান। মা উত্তর দেন, ‘না এ আমার কানু নয়।' অথচ সেই মৃতদেহটা তাঁর সন্তানেরই ছিল, কিন্তু যে সন্তান দেশের জন্য, তাঁর সহযোদ্ধাদের জন্য হাসিমুখে নিজের প্রাণ দিল, মা কী করে পারেন সেই সন্তানের পরিচয় ইংরেজকে দিয়ে দিতে? তাই তো শেষবারের মতো সন্তানকে ছোঁয়ার সুযোগ হারিয়েও, বুকে পাথর চাপা দিয়ে বলতে পেরেছিলেন ওই শব্দগুলো। কার কথা বলছি? বিপ্লবী কানাইলাল ভট্টাচার্য। 

     

    স্বাধীনতার 74বছর পর স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নাম করতে বললে বিশেষ কিছু নামই উঠে আসেঅথচ ভারতমাতার আরও যে অনেক বীর সন্তান নিঃস্বার্থ ভাবে প্রাণ দিয়েছেন দেশের জন্য, তাঁদের নাম আমরা কতবার স্মরণ করি? নাম জানলেও বাকি কতটুকু জানি তাঁদের সম্পর্কে? বহু ইতিহাস অতীতেই যেন চাপা পড়ে থাকে। তেমনই একজন হলেন বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের সদস্য কানাইলাল ভট্টাচার্য

     

    7জুলাই 1931 রাইটার্স বিল্ডিং অভিযানের অন্যতম নায়ক দীনেশ গুপ্তকে ফাঁসি দেওয়া হয় আলিপুর কোর্টেসেই মামলার রায় দিয়েছিলেন ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেট গার্লিক। এবং এরপরই তৈরি হয় গার্লিক হত্যার ব্লু প্রিন্ট। প্রথমে ঠিক করা হয় দীনেশের ফাঁসির বদলা নেবে বিমল দাশগুপ্ত। কিন্তু সেও কিছুদিনের মধ্যেই পেডি সাহেবকে হত্যা করে ফেরার হয়ে যায়। তখন গার্লিক হত্যার ভার এসে পড়ে 22বছর বয়সী কানাইলালের উপর। 

     

    আরও পড়ুন:যোগীর কোপে কবিই বাদ

     

    মাত্র কদিন আগেই কানাইলাল টাইফয়েড থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছে। তার মধ্যেই এমন কাজের ভার। বিন্দুমাত্র ভয় না পেয়ে তিনি লক্ষ্যে এগিয়ে যান। গার্লিক হত্যার আগের দিন ধাপার মাঠের নিকটবর্তী এক জঙ্গলে সুনীল চট্টোপাধ্যায়, জিতেন ঘোষের সামনে টার্গেট প্র্যাকটিস করে নিজেকে তৈরি করে নেন। কানাইলাল জানতেন তাঁকে ছদ্মনামে গোটা কাজটা করতে হবে। তাঁকে কেউ চিনবে না। তাঁর নাম হবে না। কিন্তু অগ্নিযুগের বিপ্লবীরা কবে নাম পাওয়ার, খ্যাতি পাওয়ার তোয়াক্কা করেছিলেন? তাঁদের একটাই লক্ষ্য ছিল,স্বাধীন ভারত

     

    পরদিন, অর্থাৎ 27জুলাই 1931 যথাসময়ে আলিপুর কোর্টে হাজির হন কানাইলাল ভট্টাচার্য। সঙ্গী 38 বোরের কোল্ট জুপিটার রিভলভার। এবং একটি চিরকুট, যাতে লেখা ছিল ধ্বংস হও, দীনেশ গুপ্তর অবিচারে ফাঁসির পুরস্কার লও। বন্দে মাতরম। - বিমল দাশগুপ্ত।' কোর্টের একটি কক্ষে সেই রিভলভার থেকে গার্লিক সাহেবকে গুলি চালিয়ে হত্যা করেন কানাইলাল, তারপর নিজেও পটাসিয়াম সায়ানাইড খেয়ে নেন। যদিও ততক্ষণে সেখানে উপস্থিত থাকা পুলিশের গুলিও তাঁকে ঝাঁঝরা করে দিয়েছে। এরপরই তাঁর পকেট (ভিন্ন মতে ছাতার) থেকে সেই চিরকুট উদ্ধার হয়। বিমল দাশগুপ্তের ছদ্মনামে কাজ শেষ করে প্রাণ দেন কানাইলাল ভট্টাচার্য। বহুদিন পুলিশ তাঁর আসল পরিচয় জানতে পারেনি। একদিকে যেমন তিনি দীনেশ গুপ্তর ফাঁসির বদলা নিয়েছিলেন, তেমনই অন্যদিকে সাহায্য করেছিলেন বিমল দাশগুপ্তকে। 

     

    বর্তমান সময়ে আমরা এই অচেনা বিপ্লবীকে শুধুই নামে চিনি, সে তাঁর নামে রাস্তা হোক বা কলেজ। তাঁর মহান ত্যাগ, নিঃস্বার্থ ভাবে দেশের জন্য লড়াই করে প্রাণ ত্যাগের কথা আজও অনেকে জানেন না। স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে রইল তাঁর স্মৃতিচারণ। আজও তাঁর জন্যই জয়নগর-মজিলপুরের দত্তবাজারের ভটচাজবাড়ি বিখ্যাত, সেখানেই রাখা আছে এই বিপ্লবীর আবক্ষ মূর্তি

     


    শুভস্মিতা কাঞ্জী - এর অন্যান্য লেখা


    প্রায় 100 বছর পর বিধ্বংসী সৌরঝড়ে স্তব্ধ হতে পারে আধুনিক পৃথিবীর লাইফলাইন ইন্টারনেট।

    পথ কুকুরদের জন্য শ্রীলেখার Pawsome Date

    জুজু’র মতো করোনার ভয়কে নস্যাৎ করে বাঙালি বেরিয়ে পড়ছে আবারও ‘অজানারে জানতে’

    অনীক দত্তের অপরাজিত এবং সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালী মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে।

    বিশ্ব জুড়ে হুহু করে ছড়াচ্ছে মাঙ্কি পক্স। কিন্তু কী এই রোগ, কী ভাবে হয়?

    কার্গিল যুদ্ধের নায়ক বিক্রম বাত্রার জীবনের নানান গল্প তুলে ধরেছে শের শাহ।

    স্বাধীনতার সৈনিক কানাইলাল ভট্টাচার্য-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested