×
  • নজরে
  • ছবি
  • ভিডিও
  • আমরা

  • উন্নয়নের খাজনা ও মাঝেমধ্যে তার বাজনা

    রজত রায় | 06-04-2022

    প্রতীকী ছবি।

    কলকাতার একটি বন্ধ সিনেমা হলের মালিক বাড়িটি ভেঙে  ফেলার জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করার পরে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক দাদা ঠিকাদারের কাছ থেকে 25 লক্ষ টাকা দাবি করায় কাজটি বন্ধ হয়ে গেছে। সংবাদে প্রকাশ, ঠিকাদার জানিয়েছেন যে, মালিকের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী বাড়ি ভাঙার কাজে হাত দেওয়ার পরেই ওই টাকার জন্য চাপের মুখে পড়ে তিনি কাজটি বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, তিনি 10 লক্ষ টাকা পর্যন্ত দিতে রাজি ছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিক দাদাটি 25 লক্ষ টাকার দাবিতে অনড় থাকায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্নটা টাকাটা 25 লক্ষ হবে, নাকি 10 লক্ষ, তা নিয়ে। অর্থাৎ, ঠিকাদারও জানেন, একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিতেই হবে। তারপর বাড়ি ভাঙা হবে, সেই জায়গায় মালিক শপিং মল করবেন, বা অন্য কিছু। মোদ্দা কথা, রাজ্যব্যাপী যে উন্নয়নের জোয়ার চলছে, তাতে আর একটা বাড়তি ঢেউ উঠবে মাত্র। আর এ জন্য একটা পরিমাণ পর্যন্ত ‘খাজনা’ দিতেই হবে। এটাই নিয়ম। রাজ্যের প্রতিটি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকেই এই ‘খাজনা’ আদায় করাটাই রীতি। সেটা বাড়ি ভেঙে আবার গড়া, নতুন দোকান শুরু করা থেকে শুরু করে স্কুলে স্কুলে শিক্ষকের চাকরি দেওয়া, প্রতিটি ক্ষেত্রেই এই ‘খাজনা’ দিতে হবে। কারা এই ‘খাজনা’ আদায় করবে, কারা তার বখরা পাবে, সে প্রশ্ন নিয়ে মাথা ঘামিয়ে লাভ কী? এটাই এখন বিধিসম্মত ব্যবস্থা। যাঁরা এই সব আর্থিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে উন্নয়ন ঘটাচ্ছেন, তাঁরা বিলক্ষণ জানেন ‘খাজনা’ কোথায় দিতে হবে, কাকে দিতে হবে। তাঁরা সেটা দিয়েও দেন এবং এ নিয়ে নীরবতা পালন করে বাস্তবজ্ঞানের পরিচয় দেন।

     

    আরও পড়ুন: রাজনীতির হরিবোলে অলক্ষ্যে রয়ে যান হরিচাঁদ

     

    তবু মাঝে মধ্যে কোথাও কোথাও কেউ কেউ বেসুরে বেজে ওঠেন। যেমন, এই ঘটনার ঠিকাদার মুখ খুলেছেন। কখনও ‘খাজনা’ আদায়কারীরা ঠিকমতো খোঁজ না নিয়ে আদায়ে হাজির হয়ে তালভঙ্গ করে। যেমন, ক'বছর আগে শাসক দলের তদানীন্তন সাংসদ ও বিশিষ্ট ঐতিহাসিক এবং নেতাজি সুভাষচন্দ্রের পৌত্র সুগত বসুর বাড়িতে মেরামতির কাজ শুরু হতেই আদায়কারীরা হাজির হয়ে খবর হয়েছিল। কিন্তু আরও কয়েক বছর আগে শাসক দলেরই এক রাজ্যসভা সদস্যের নিউ আলিপুরের পৈতৃক বাড়ি ভেঙে নতুন করে গড়তে যাওয়ার সময় ঠিকাদারকে 10 লক্ষ টাকা দিতে হয়েছিল। বলা হয়েছিল, নেহাৎ নিজেদের লোক বলেই কম ‘খাজনা’ ধার্য হয়েছে। কখনও কখনও এই ‘খাজনা’কে আমরা অন্য নামেও অভিহিত হতে দেখি—কাটমানি। আমফানের ক্ষয়ক্ষতি সারাতে গ্রামের লোকজনকে  দেয় অর্থের একটা অংশ যে কাটমানিতে পরিণত হয়েছিল, এ নিয়ে তখনই খুব হৈচৈ হয়। সাংসদ শতাব্দী রায় থেকে শুরু করে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও তখন এ নিয়ে মুখ খুলতে শোনা গিয়েছিল। স্কুলশিক্ষকদের চাকরিতে নিয়োগ নিয়ে কত ‘খাজনা’ কে বা কারা আদায় করেছিল, তা নিয়ে এখন সিবিআই মাথা ঘামাচ্ছে। শোনা যাচ্ছে, ‘খাজনা’র বখরা থেকে বঞ্চিত কিছু লোকই এই সব তথ্য ফাঁস করছে। মাঝে মধ্যেই কয়লা, গরু, বালি ইত্যাদি চোরাচালানের অবৈধ ব্যবসাকে কেন্দ্র করে মারামারি খুনোখুনির খবর সংবাদ হয়। দেখে মনে হয়, এই সব গণ্ডগোল সহজেই এড়ানো যায়, যদি উন্নয়নের কোন কাজে কত ‘খাজনা’ দিতে হবে, এবং সেই ‘খাজনা’ বাবদ প্রাপ্ত অর্থ কারা কারা কী হারে পাবে, এ সবই সরকারি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া দরকার। তাহলে আর ঠিকাদারের 10 লক্ষ বা 25 লক্ষ টাকা নিয়ে টানাটানি করতে হবে না। বখরা নিয়ে ভাগাভাগির সময় খুনোখুনিও হবে না। ‘খাজনা’ ঠিকমতো দিয়েই রাজ্যে উন্নয়নের গাড়ি দ্রত বেগে ছুটবে।

     


    রজত রায় - এর অন্যান্য লেখা


    তীজন বাঈ ও তাঁর উত্তরসূরী সীমা ঘোষের পাণ্ডবাণী মহাভারতের গল্পই বলে

    খোদ রাজধানীর বহু জায়গাতেও ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে

    CAA-এর বিরুদ্ধে দেশজুড়ে আন্দোলন আর পাঁচটা রাজনৈতিক আন্দোলনের মত নয়। এই লড়াই সংবিধান বাঁচানোর লড়াই

    উন্নয়নের খাজনা যখন দিতেই হবে, তখন আয়করের মতো একটা স্বীকৃত ঘোষিত হার থাকলেই ভাল!

    গান্ধী পরিবারের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার কি বং বং-এর মতো রাজনৈতিক গড় রক্ষা করতে পারবেন?

    নতুন নাগরিকত্ব আইন, এন আর সি এবং এন পি আর এর বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে আজ যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, তা এক কথায়

    উন্নয়নের খাজনা ও মাঝেমধ্যে তার বাজনা-4thpillars

    Subscribe to our notification

    Click to Send Notification button to get the latest news, updates (No email required).

    Not Interested